সংবাদ পরিক্রমা
- ইসরায়েলী দাবিঃ ন্যাটো গাদ্দাফিকে আহত করে বিদ্রোহীদের হাতে খুনের জন্য তুলে দেয়
ইউকেবেঙ্গলি - ২২ অক্টৌবর ২০১১, শনিবারঃ ন্যাটোর সামরিক সহায়তায় আল-কায়েদা সমন্বিত বিদ্রোহীদের হাতে লিবিয়ার জনরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি নিহত হওয়ার অনিশ্চিত খবর স্বীকার করেছে গাদ্দাফি-সমর্থক একাধিক সূত্র। গাদ্দাফির পুত্র মুতাস্সিম ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকেও কাছাকাছি সময়ে বিদ্রোহীরা জীবিত অবস্থায় বন্দী করে এবং পরে তাকে হত্যা করা হয়। গাদ্দাফির নিহত হওয়ার সময়ের কয়েকটি ভিডিও-চিত্রও প্রকাশিত হয়েছে।
বিদ্রোহীদের সংস্থা ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এনটিসি) প্রথমে গাদ্দাফিকে গ্রেফতার ও হত্যা করা বিষয়ক পরস্পর-বিরোধী তথ্য দিয়েছিল যা ন্যাটো বা যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারেনি। পরে ন্যাটো জানিয়েছে, গাদ্দাফিকে বহনকারী গাড়ি-বহরে পরিচালিত তাদের আকাশ হামলায় গাদ্দাফি আহত হন এবং বিদ্রোহী যোদ্ধারা তখন তাঁকে জীবিত অবস্থায় গ্রেফতার করে। প্রকাশিত ভিডিও-চিত্রে গাদ্দাফিকে জীবিত অবস্থায় কথা বলতে দেখা গেছে। কিছুক্ষণ পর দেখা যায় বিদ্রোহীরা রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে সড়কের উপরে টানা-হেঁচড়া করছে। স্পস্টতঃ তখন তাঁর বুকের বাঁ দিক থেকে রক্ত ঝড়ছিল। এ-সময় তাঁর শরীর থেকে কাপড় খুলে ফেলা হয়।
শুরুতে কোন মন্তব্য না করলেও গতকাল ওয়াশিংটন জানিয়েছে গাদ্দাফির গাড়ি-বহরে হামলায় অংশ নিয়েছে মার্কিন পাইলট-বিহীন প্রিডেটর ড্রৌন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা-সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন যে, মার্কিন ড্রৌনের পাশাপাশি ফরাসী যুদ্ধ-বিমানও সিরতে থেকে বের হওয়া ঐ গাড়ি-বহরে গাইডেড-মিসাইল ছুঁড়েছিল।
ইন্টারনেটে প্রকাশিত একটি ভিডিওর বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, ২২ বছর বয়সী এক বিদ্রোহী গাদ্দাফির বুকে ও মাথায় গুলি করার দাবী করেছে। সানাদ আল-সাদেক আল-উরেইবি নামের এ-বিদ্রোহী ভাষ্যঃ 'আমি তাকে (গাদ্দাফির) লক্ষ্য করে দু'টি গুলি ছুঁড়েছিলাম, একটি তাঁর বগলে লাগে এবং আরেকটি লাগে মাথায়।' তার বক্তব্য-মতে, গুলিতে আহত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গাদ্দাফি মারা যাননি, তার মৃত্যু হতে প্রায় আধ-ঘণ্টা সময় লেগেছে।
এদিকে, ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা ম্যাগাজিন দেবকা এক রিপৌর্টে জানিয়েছে যে, ন্যাটোর 'স্পেশাল-ফৌর্স' সিরতে গাদ্দাফির অবস্থান নির্ণয় করে তাঁকে আটক করে। তারপর তাঁর দু'পায়ে গুলি করে মিসরাতার একটি মিলিশিয়া দলকে গাদ্দাফির অবস্থান জানিয়ে সেখানে আসতে বলে। ন্যাটো অনুমান করেছিল যে, মিসরাতার যোদ্ধাদের গাদ্দাফিকে হত্যা করার সম্ভবনা প্রবল, তাই তারা অন্য কোন দলকে না জানিয়ে তাদেরকেই খবর দেয়। ন্যাটো চেয়েছিল স্বজাতির হাতেই মৃত্যু হোক গাদ্দাফির - দাবী করেছে দেবকা। গাদ্দাফির অনুগত বড় গোত্রগুলো যেমন গাদ্দাফা, ওয়ারফালা, আল ওয়াকির, মাগারিয়া ইত্যাদি তাঁর মৃত্যুর প্রতিশোধ না নিয়ে থামবে না, ফলে এ-মৃত্যুতে লিবিয়ার আভ্যন্তরীন লড়াই থামার কোন সম্ভবনা আপাতত নেই বলে ম্যাগাজিনটি মন্তব্য করেছে।
এ-ঘটনায় স্বস্তি ও আনন্দ প্রকাশ করেছে যুদ্ধে অংশ নেয়া ন্যাটোর সদস্য-রাষ্ট্রগুলোর প্রধানরা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, 'লিবিয়ার জনগণের এক দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটলো আজ'। তিনি আরও বলেন, 'সামনে কঠিন দিন অপেক্ষা করছে'। লিবিয়ার যুদ্ধে ন্যাটো ও আরব দেশসমূহের সহযোগীতার সম্পর্ককে তিনি 'একুশ শতকের একটি উদাহরণ' বলে মন্তব্য করেন।
ব্রিটেইনের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'লিবিয়ার ব্রিটেইন যে ভূমিকা পালন করেছে তাতে আমি গর্বিত'। 'লিবিয়ার জনগণের সামনে এখন আরও বেশি সুযোগ এসেছে একটি শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের' - যোগ করেন তিনি।
'লিবিয়ার জনগণের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো আজ - ঐক্যে পূনঃএকত্রীকরণের ও স্বাধীনতার' - মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সার্কোজি। উল্লেখ্যঃ লিবিয়ায় যুদ্ধে যেতে ক্যামেরোন ও সার্কোজিই ন্যাটো ও জাতিসঙ্ঘকে প্রভাবিত করতে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছেন।
লিবিয়া যুদ্ধে ন্যাটোর অন্যতম আরব সহযোগী কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি।
গাদ্দাফি নিহত হওয়ার ঘটনা-পরম্পরায় প্রশ্ন উঠেছে বন্দীকে বিনা-বিচারে হত্যার বৈধতা ও নায্যতা নিয়ে। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান গাদ্দাফির মৃত্যুর পূর্ণ ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবী করেছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র-মন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ দাবী করেছেন, 'গাদ্দাফির হত্যার করার মধ্য দিয়ে জেনেভা কনভেনশন ভঙ্গ করা হয়েছে'। তিনি বলেন, 'কোন অবস্থাতেই যুদ্ধ-বন্দীকে হত্যা করা বৈধ নয়'।
ভেনিজুয়েলায় প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ বে-আইনীভাবে গাদ্দাফিকে হত্যা করায় 'ক্ষোভ' প্রকাশ করেছেন। তিনি গাদ্দাফিকে একজন মহান বিপ্লবী-যোদ্ধা ও শহীদ বলে উল্লেখ করে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরৌপ লিবিয়ার তেল-সম্পদ দখলের উদ্দেশ্যে দেশটিতে গিয়েছে'।
আপনার মন্তব্য
সম্পর্কিত অন্যান্য
- লিবীয় নেতা গাদ্দাফিকে হত্যার দাবী বিদ্রোহীদেরঃ ন্যাটো বা যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত নয়
- বনি ওয়ালিদে আবারও যুদ্ধ-পরাজয়ঃ লিবীয় বিদ্রোহী-শিবিরে ভাঙ্গন
- জাতিসঙ্ঘের রেজ্যুলুশনের অসারতা প্রমাণ করে সিরতে ন্যাটোর গণহত্যা
- ত্রিপোলির নৌ-ঘাটিতে বিষ্ফোরণঃ গেরিলা যুদ্ধ শুরু করেছে লিবীয়রা
- বনি ওয়ালিদে ন্যাটোর ব্যর্থ প্যারাশুট অবতরণঃ লিবীয় বাহিনীর হাতে ১৭ গ্রেফতারিত