সংবাদ পরিক্রমা
- নতুন প্রধানমন্ত্রী ম্যেঃ কর্বিনকে চ্যালেইঞ্জ ঈগলের
ইউকেবেঙ্গলি - ১১ জুলাই ২০১৬, সোমবারঃ ব্রেক্সিট গণভৌটের পর থেকে ব্রিটেইনে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই আজ নিশ্চিত হয়েছে কনসার্টিভ দলের পরবর্তী নেতা ও দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন থেরিসা ম্যে। অন্যদিকে বিরোধীদল লেইবার পার্টির বিদ্রোহী এমপি এ্যাঞ্জেলা ঈগল সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন, তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে জেরেমি কর্বিনের নেতৃত্বকে চ্যালেইঞ্জ করেছেন।
কনসার্ভেটিভ পার্টির নেতা-নির্বাচনের দুই দফা ভৌটগ্রহণ-শেষে থেরিসা ম্যে এবং অ্যাণ্ড্রি লীড্সম টিকে ছিলেন। সেপ্টেম্বর মাসে দলের জাতীয় সম্মেলনে সদস্যদের ভৌটে তাঁদের মধ্যে একজনের দলনেত্রী নির্বাচিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আজ অকস্মাৎ মিসেস লীড্সম প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলে থেরিসা ম্যের বিজয় নিশ্চিত হয়।
২৬ বছর আগে মার্গারেট থ্যাচারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ব্রিটেইন আবারও নারী সরকার-প্রধান পেতে যাচ্ছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেইভেইড ক্যামেরোন শীঘ্রই ম্যের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীত্ব নিশ্চিত হওয়ার পর থেরিসা ম্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি 'ব্রেক্সিটকে সফল' করবেন, যদিও গণভৌটে তিনি ইইউতে থাকার পক্ষে প্রচার চালিয়েছিলেন।
এদিকে লেইবার দলের নেতৃত্বের সঙ্কট আরও ঘনীভূত হয়েছে আজ এ্যাঞ্জেলা ঈগলের নেতৃত্বে চ্যালেইঞ্জের ঘোষণায়। ব্রেক্সিটের পর থেকেই লেইবার দলের কর্বিন-বিরোধী এমপিরা তৎপর হন তাঁকে সরিয়ে দিতে। গণভৌটের আগেই ডেইলী টেলিগ্রাফ এক প্রতিবেদনে জানায় অজ্ঞাতনামা লেইবার এমপিরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কর্বিনকে অপসারণের।
কর্বিনের উপর থেকে এমপি হিলারি বেন আস্থা প্রত্যাহার করার পর তাঁকে ছায়ামন্ত্রীর পদ থেকে অব্যাহত দেন কর্বিন। সে-সূত্রে কয়েক ডজন ছায়ামন্ত্রী পদত্যাগ করেন। অবশেষে এমপিরা এক অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করেন কর্বিনের বিরুদ্ধে। কিন্তু পার্লামেণ্টের বাইরে লেইবার দলের সাধারণ সদস্য ও সমর্থকরা তাঁর প্রতি সমর্থন বজায় রাখে। লণ্ডনের পার্লামেণ্ট স্কোয়ারে কর্বিনের সমর্থনে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রায় দশ হাজার সমর্থক যোগ দেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁর সমর্থনে সমাবেশ হয়েছে। গত এক মাসে লেইবার দলে অন্ততঃ এক লাখ নতুন সদস্য যুক্ত হয়েছেন। অনুমান করা হচ্ছে তাদের বড়ো অংশ কর্বিনের প্রতি সহমর্মী।
লেইবার দলের নিয়মানুযায়ী নেতা অপসারণের বিধিসম্মত উপায় হচ্ছে নেতৃত্ব চ্যালেইঞ্জ করে কাউকে প্রার্থীতা দাখিল করতে হবে। অনানুষ্ঠানিক একাধিক জনমত জরীপে দেখা গিয়েছে, তেমন পরিস্থিতিতে কর্বিন আবারও বিজয়ী হবেন।
এ-মূহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে কর্বিন কি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নতুন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন, নাকি তাঁকেও চ্যালেইঞ্জকারীর মতো ২০% দলীয় সাংসদের সমর্থন পেতে হবে। এমপিদের অনাস্থা ভৌট বিবেচনায় নিলে অনুমান করা যায় কর্বিন প্রয়োজনীয় সংখ্যক - অর্থাৎ মোট ৫১ জন - এমপির সমর্থন পাবেন না। কারণ অনাস্থা প্রস্তাবে তাঁর পক্ষে ছিলেন মোটে ৪০ জন এমপি।
কর্বিন-বিরোধীরা দাবী করছেন, কর্বিনকে এমপিদের সমর্থন নিয়ে নেতা-নির্বাচনে আসতে হবে। অন্যদিকে কর্বিনের সমর্থকরা অবশ্য আত্মবিশ্বাসের সাথে জানাচ্ছেন যে, তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ব্যালট পাবেন। গতকাল বিবিসিতে এক সাক্ষাৎকারে কর্বিন জানান তাকে নেতা-নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়া হলে তিনি প্রয়োজনে আদালতের স্মরণাপন্ন হবেন।
ঈগলের চ্যালেইঞ্জ মোকাবেলায় কর্বিন নেতা-নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি-না তার ফয়সালা হবে আগামীকাল লেইবার পার্টির সর্বোচ্চ কমিটী 'ন্যাশনাল এক্সেকিউটিভ কমিটী' বা এনইসিতে।
আপনার মন্তব্য
সম্পর্কিত অন্যান্য
- চিল্কট রিপৌর্টে উন্মোচিত ইরাক যুদ্ধের পশ্চাৎপটঃ দায় নিয়েও অননুতপ্ত ব্লেয়ার, কর্বিনের ক্ষমা প্রার্থনা
- যুক্তরাজ্যের রক্ষণশীল দলে নেতা-নির্বাচনঃ এগিয়ে থেরিসা মে, বাদ পড়লেন ফক্স
- রক্ষনশীল দলের নেতা-নির্বাচনঃ সরে দাঁড়ালেন বরিস জনসন, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাইকেল গৌভ ও থেরিসা মে
- লেইবার পার্টি 'ক্যু': কর্বিনের উপর 'অনাস্থা' প্রস্তাবে ভৌট আজ
- লেইবার পার্টিতে 'ক্যু': জেরেমি কর্বিনের সমর্থনে পার্লামেণ্ট স্কোয়ারে সমাবেশ