সংবাদ পরিক্রমা
- পতিত প্রেসিডেন্ট মুবারকের ফাঁসি হওয়া উচিতঃ মিশরের প্রসেকিউটারদের অভিমত
ইউকেবেঙ্গলি - ৫ জানুয়ারী ২০১২, বৃহস্পতিবারঃ গত বছর মিশরে শান্তিপূর্ণ গণ-বিক্ষোভ কালে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে শতো-শতো প্রতিবাদী মানুষের মৃত্যুর জন্য শেষপর্যন্ত দেশটির পতিত, বন্দী ও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারককে আজ দায়ী করে তাঁর ফাঁসি চেয়েছেন কায়রোর আদালতের প্রসেকিউটারগণ।
রাজধানীর পুলিস এ্যাকাডেমীর মিলনায়তনে প্রতিষ্ঠিত বিচারালয়ে প্রসেকিউটারগণ তাঁদের সমাপনী বক্তব্য দান-কালে মুবারকের ফাঁসির কথা বলেন। এক প্রসেকিউটার, নাম মোস্তফা খাতের, যুক্তি দেখিয়ে বলেন, মিশরীয় আইনে যেখানে ইচ্ছাকৃত একটি খুনের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে, সেখানে শতো-শতো মানুষকে খুন করার জন্য কী শাস্তি উপযুক্ত হতে পারে? তিনি মুসলিম ধর্মগ্রন্থ কুরআন থেকে আবৃত্তি করে শাস্তি হিসেবে জীবনের বদলে জীবন হরণের পক্ষে যুক্তি দেন।
প্রধান প্রসেকিউটার মোস্তফা সুলেইমান বলেন, প্রেসিডেন্টের পদ-মর্যাদার কারণেই মুবারক হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। যদিও সুলেইমান এমন কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি যাতে দেখা যায় যে, তিনি বিক্ষোভকারীদের উপর মারাত্মক শক্তি প্রয়োগ করার প্রত্যক্ষ নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু আদালতে দেয়া মুবারকের নিজ-ভাষ্য থেকেই যুক্তি সংগ্রহ করে তিনি দেখান যে, মুবরাক শক্তি প্রয়োগের নির্দেশই দিয়ে থাকবেন।
উল্লেখ্য, আদালতে নিজ-ভাষ্য দিতে গিয়ে মুবারক বলেছিলেন, ২৮ জানুয়ারী পুলিস বাহিনীর পতন হবার পর রাস্তায় নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণের সেনাবাহিনী তাঁর দেয়া নির্দেশ পালনে অস্বীকার করে। মুবারক বলেছিলেন, ‘যখন দেখতে পেলাম যেভাবে চাওয়া হয়েছিলো, সেভাবে তাঁরা দায়িত্ব পালন করেননি এবং কিছুই করেননি, তখন আমি পদত্যাগ বাধ্য হই।’
মুবারকের বক্তব্য থেকে যুক্তি টেনে প্রধান প্রসেকিউটার বলেন, ‘মুবারক সাহেব সামরিক বাহিনীকে শক্তি প্রয়োগ করতে না বলে থাকেন, তবে কী করতে বলেছিলেন? রাস্তা নিয়ন্ত্রণের জন্য আর কী করতে তিনি তাঁদেরকে চেয়েছিলেন?’
প্রেসিকিউটার সুলেইমান ইতিহাস উল্লখ করে বলেন, ১৯৯৭ সালে মিশরের লুক্সরে বোমা-হামলায় বিদেশীদের হত্যা করা থেকে সন্ত্রাসীদের রুখতে না পারার কারণে মুববারক সাহেব ঘটনাস্থলে উড়ে গিয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বরখাস্ত করে বর্তমান মামলায় তাঁর সহ-অভিযুক্ত হাবিব এল-আলদিকে নিযুক্ত করেন। সুলেইমান প্রশ্নের আকার বলেন, ‘কীভাবে সম্ভব যে, তিনি কয়েকজন বিদেশীর প্রাণহানিতে এতো রাগান্বিত হলেন, অথচ নিজের জনগণের (জীবনের) ব্যাপারে কোনো পরোয়া করলেন না কিংবা সমানভাবে রাগান্বিত হলেন না?’
প্রসেকিউশনের উপসংহারে সুলেইমান স্বীকার করেন যে, মুবারক তাঁর বক্তব্যে সেনাবাহিনীকে শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেননি বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্ত সুলেইমান একে ‘উন্মাদ ব্যক্তির কথা’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুর জন্য মুবারক দায়ী, কারণ প্রেসিডেন্ট হিসেবে এ-বিষয়ে তিনি পূর্ব থেকেই জানতেন কিংবা জানা উচিত ছিলো।
মুবারক-পক্ষের আইনজীবীরা আগামী সপ্তাহ থেকে তাদের সাফাই শুরু করবেন। তবে ধারণা করা হচ্ছে, যা করার তা দ্রুতার সাথেই সম্পন্ন হবে, যাতে ২৫ জানুয়ারীর গণ-অভ্যূত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে রায় ঘোষণা করা সম্ভব নয়।
আপনার মন্তব্য
সম্পর্কিত অন্যান্য
- তাহ্রির স্কোয়ারের প্রত্যাবর্তনঃ মিশরে সেনা-শাসনের বিরুদ্ধে 'লক্ষ-লোকের' বিক্ষোভ
- প্যালেস্টাইনী কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রত্বের প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছে জাতিসংঘেঃ মার্কিন ভিটো সামনে
- জনতার রোষে কায়রোর ইসরায়েলী দূতাবাস ভাঙ্গনঃ কূটনীতিকদের আকাশপথে উদ্ধার
- মিশরের সীমান্তরক্ষী হত্যা করেছে ইসরায়েলঃ তেল-আবিব থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার কায়রোর
- গণ-অভ্যূত্থানঃ রাজনৈতিক সুনামি