সংবাদ পরিক্রমা
- প্রাক্তন সিআইএ গোয়েন্দা এডওয়ার্ড স্নৌডেন রাশিয়ায়ঃ আটকে রাখার অনুরোধ যুক্তরাষ্ট্রের
ইউকেবেঙ্গলি - ২৪ জুন ২০১৩, সোমবারঃ যুক্তরাষ্ট্রের গোপন দলিল ফাঁস করা প্রাক্তন গোয়েন্দা এডওয়ার্ড স্নৌডেন গ্রেফতারিত হওয়া এড়াতে গতকাল হংকং ত্যাগ করে রাশিয়ায় পৌঁছলে, তাঁকে ফিরিয়ে দিতে মোস্কৌকে অনুরোধ জানিয়েছে ওয়াশিংটন। স্লৌডেনের আজ কিউবা হয়ে ইকুয়াডরে যাবার কথা থাকলেও নির্ধারিত বিমানে তাঁকে উঠতে দেখা যায়নি। স্নৌডেনের অবস্থান ও নিরাপত্তাকে ঘিরে জল্পনা-কল্পনার মাঝে জুলিয়ান এ্যাসাঞ্জ জানিয়েছেন, 'নিরাপদে' রয়েছেন স্নৌডেন।
সম্প্রতি ব্রিটেইনে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অভূতপূর্ব আকারের ও মাত্রার গণ-নজরদারীর তথ্য ফাঁস করেন সেদেশের গোয়েন্দা সংস্থা সিআই'র প্রাক্তন প্রযুক্তিবিদ, ৩০ বছর বয়সী এডওয়ার্ড জোসেফ স্নৌডেন। মাস তিনেক আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ)-র একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বূজ় এ্যালেন হ্যামিল্টনের হাওয়াই-এ অবস্থিত দপ্তরে যোগ দেন। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তৎপরতাকে অন্যায় মনে করে নিজ প্রাণ হারানোর ঝুঁকি আছে জেনেও তিনি সিদ্ধান্ত নেন তথ্য ফাঁস করার। এ-মাসের ৫ তারিখে থেকে দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত হতে থাকে মার্কিন নজরদারির লোমহর্ষক সব তথ্য।
স্নৌডেনের প্রকাশিত দলিলাদি থেকে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ) বিভিন্ন টেলিফৌন কোম্পানির 'কল-ডেইটা' গোপনে সংগ্রহ করে। ইণ্টারনেটের বৃহৎ কোম্পানি যেমন, গূগল, ফেইসবুক, মাইক্রোসফ্ট, এ্যাপল, স্কাইপি, এওএল ইত্যাদির কম্পিউটারের রক্ষিত নিরীহ গ্রাহকদের তথ্যেও সরাসরি নজরদারি চালাতে পারে তারা। ওদিকে ব্রিটেইনেও সরকারের গোয়েন্দা কেন্দ্র গভর্নমেণ্ট কমিউনিকেশন হেড কোয়ার্টার (জিসিএইচকিউ) একই কায়দায় নাগরিকদের ডিজিটাল তথ্যে নজরদারী করছে। ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত জি২০ সম্মেলনে জিসিএইচকিউ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের ইমেইল ও টেলিফৌন যোগাযোগের তথ্য চুরি করে তাদের সাথে বিভিন্ন দরকষাকষিতে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছিলো। সর্বশেষ প্রকাশিত দেখা গিয়েছে, ব্রিটেইন গোপনে ট্রান্স-আটলান্টিক সাবমেরিন কেবলে অভিগ্রাহক যন্ত্র বসিয়ে সমগ্র পৃথিবীর ইণ্টারনেটের উপরে নজরাদারী চালাচ্ছে।
গত ২০ মে এডওয়ার্ড স্নৌডেন তাঁর মৃগী রোগের চিকিৎসার অজুহাত দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের হংকং-এ আসেন। সেখান থেকেই তিনি ব্রিটেইনের দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের মাধ্যমে ফাঁস করতে থাকেন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেইনের কর্তৃপক্ষের গণ-নজরদারীর চাঞ্চল্যকর প্রকল্পগুলোর গোপন তথ্য। তাঁর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনে যুক্তরাষ্ট্র এবং হংকংকে অনুরোধ করে তাঁকে গ্রেফতার করে হস্তান্তর করার।
কিন্তু গতকাল রোববার সকালে স্নৌডেন রাশিয়ার এ্যারোফ্লেটের একটি বিমানে চড়ে মস্কৌর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। বিমানটি চীনের আকাশসীমা পেড়িয়ে যাওয়ার পর হংকং কর্তৃপক্ষ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাঁর চলে যাওয়ার খবর প্রকাশ করে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ অসম্পূর্ণ ছিলো। ফলে স্নৌডেনকে আটকে রাখার আইনতঃ কোন ভিত্তি ছিলো না।
আজ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাশিয়াকে অনুরোধ করেছেন যেনো স্নৌডেন 'রাশিয়ার মাটি' ত্যাগ করতে না পারে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র গত সন্ধ্যায় প্রেসিডেণ্ট পুতিনের একজন মুখপাত্র জানিয়েছিলেন যে স্নৌডেনের আগমন সম্পর্কে তিনি 'কিছুই জানতেন না'।
রাশিয়া থেকে স্নৌডেন কোথায় যাবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে শুরুতে বিভ্রান্তি থাকলেও ইকুয়াডর জানিয়েছে সেদেশে রাজনৈতিক নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন এ-গোয়েন্দা। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী রিকার্ডো পাতিনো ট্যুইটারের মাধ্যমে জানান, 'এডওয়ার্ড জে. স্নৌডেনের কাছ থেকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের অনুরোধ পেয়েছে ইকুয়াডরের সরকার'।
The Government of Ecuador has received an asylum request from Edward J. #Snowden
— Ricardo Patiño Aroca (@RicardoPatinoEC) June 23, 2013
এর আগে, গত বছর সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলীক্সের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান এ্যাসাঞ্জকেও অনুরূপ পরিস্থতিতে লণ্ডনস্থ দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয় ইকুয়াডর। কিন্তু ব্রিটেইনের আইনী বাধার কারণে এখনও সেখানেই বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার এ-নাগরিক।
এডওয়ার্ড স্নৌডেনকে হংকং ত্যাগ করতে সহায়তা করছে উইকিলীক্স। আজ লণ্ডনে অনুষ্ঠিত এক টেলিকনফারেন্সে দ্য গার্ডিয়ানকে জুলিয়ান এ্যাসাঞ্জ জানান, 'স্নৌডেন সুস্থ ও নিরাপদ রয়েছেন'। এ-মুহূর্তে কোথায় আছেন স্নৌডেন তাও তিনি জানেন তবে তা প্রকাশ করতে অস্বীকার করেন।
Assange: we are aware of where Snowden is, he is safe and "his spirits are high". We cannot reveal what country he is in at this time.
— WikiLeaks (@wikileaks) June 24, 2013
হংকং ছাড়ার পর থেকে স্নৌডেনের থাকা-খাওয়ার খরচ উইকিলীক্স বহন করছে বলেও তিনি জানান। চীনের কর্তৃপক্ষ স্নৌডেনের সাথে কথা বলেছে কিনা - অর্থাৎ তাঁর কাছে রক্ষিত যুক্তরাষ্ট্রের গোপন ও স্পর্শকাতর তথ্য পেয়েছে কিনা - এমন প্রশ্নের উত্তরে এ্যাসাঞ্জ বলেনঃ 'আমার জানা মতে সে-কথা মিথ্যা'।
আপনার মন্তব্য
সম্পর্কিত অন্যান্য
- সিরিয়ার সরকার উৎখাতে জিহাদীদেরকে সরাসরি অস্ত্র দিবে যুক্তরাষ্ট্রঃ নৌ-ফ্লাই-জৌন আরোপের সম্ভাবনা
- রাশিয়ার উদ্বেগের মাঝে জর্ডানে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ-ক্রীড়া 'অধীর সিংহ'
- সিরিয়া গৃহযুদ্ধঃ ব্রিটেইন-ফ্রান্স-যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি রাশিয়া
- ইরানের সাথে পরমাণু-প্রকল্প নিয়ে আলোচনাঃ ছাড় দিতে রাজি ছয় পরাশক্তি
- গৃহযুদ্ধের মধ্যেও সিরিয়ায় গণভৌট অনুষ্ঠিতঃ নতুন সংবিধানের পক্ষে ৮৯% সমর্থন