সংবাদ পরিক্রমা
- ভারতের উচ্চাকাঙ্খী পাইপলাইন প্রকল্পঃ মায়ানমার পর্যন্ত জ্বালানী করিডোর হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ
ইউকেবেঙ্গলি - লণ্ডন, ১৫ অগাষ্ট ২০১৬, সোমবারঃ পূর্বভারতীয় রাজ্যগুলোর সাথে মূল ভূখণ্ডের জ্বালানী সংযোগ নির্মাণার্থে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে মায়ানমার পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করতে চায় ভারত। বাংলাদেশের সরকারেরও আপত্তি নেই। ভারতের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস বিষয়ক মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের সাথে গতকাল কোলকাতায় সাংবাদিকদের আলাপকালে প্রকাশিত হয় এসব তথ্য। খবর ইকোনমিক টাইম্স, বিজনেস ষ্ট্যাণ্ডার্ড ও এনার্জি গ্লৌবাল ডট কমের।
ধর্মেন্দ্র প্রধান জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তাঁর 'ফলপ্রসূ' আলাপ হয়েছে। সাংবাদিকদেরকে তিনি আরও বলেন, পেট্রোলিয়াম এ্যাণ্ড ন্যাচারাল গ্যাস রেগুলেটরী বৌর্ড ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের সীমান্ত-ঘেঁষে পশ্চিমবঙ্গের কোন্তাই থেকে হালদা হয়ে দত্তপুলিয়া পর্যন্ত তেল ও গ্যাসের পাইপলাইন বসানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
"[এ-পাইপলাইন] বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিয়ে যাবার ব্যাপার আমরা বাংলাদেশী বন্ধুদের সাথে আলাপ করে সম্মত হয়েছি"। ভারতের পরিকল্পনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, "পাইপলাইনটিকে আবার শিলিগুড়ি দিয়ে ভারতে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও আলাপ হচ্ছে"।
এর আগে গত শনিবার ভারতের রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত তেল-গ্যাস সংস্থা অয়েল এ্যাণ্ড ন্যাচারাল গ্যাস কর্পোরেইশনের নির্বাহী পরিচালক এস. সি. সোনি জানান, পূর্বভারতীয় রাজ্যগুলোতে বর্তমানে প্রচুর গ্যাসের অপচয় হয়। "তাই আমাদের পরিকল্পনা হলো এ-গ্যাস অন্যত্র পাঠানো যেখানে তা কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হতে পারবে", জানান সোনি। বাংলাদেশের পূর্বে অবস্থিত পূর্বভারতীয় রাজ্যগুলোতে শিল্প-ভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশ না হওয়া ও অবকাঠামোগত দূর্বলতার কারণে সেখানে উৎপাদিত জ্বালানীর কার্যকর ব্যবহার হয় না।
সোনি আরও জানান, বর্তমান প্রকল্পটি পূর্বভারতের জন্য 'হাইড্রোকার্বন ভিশন ২০৩০' পরিকল্পনার অংশ। বাংলাদেশের পেট্রোলিয়াম কর্পোরেইশনের সাথে ইণ্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেইশন এ-বছরের এপ্রিলে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর আওতায় বাংলাদেশের চট্টগ্রামে যৌথভাবে একটি এলপিজি টার্মিন্যাল স্থাপন করা হবে। এছাড়া আসামের নুমালিগড় রিফাইনারি ও বাংলাদেশের পেট্রোলিয়াম কর্পোরেইশনের মধ্যকার অন্য একটি চুক্তির আওতায় পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর পর্যন্ত অন্য একটি পাইপলাইন নির্মিত হবে যার মাধ্যমে বাংলাদেশে ডিসেল বিক্রি করা হবে।
গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে পাইপলাইনের ব্যাপারে আলাপ হয়। উভয় নেতাই স্ব স্ব প্রশাসনকে এ-সংক্রান্ত একটি জয়েণ্ট ভেঞ্চার কোম্পানি প্রতিষ্ঠার খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করতে নির্দেশ দেন, যা এ-পাইপলাইন নির্মাণ করবে। গত সপ্তায় উভয় দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় আসামের গুয়াহাটিতে। এ-বছরের শেষ নাগাদ দ্বিতীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
ভারতের 'হাইড্রোকার্বন ভিশন ২০৩০' পরিকল্পনার আওতাধীন রাজ্যগুলো হচ্ছে আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যাণ্ড, মিজোরাম ও ত্রিপুরা। ২০৩০ সালের মধ্যে এ-অঞ্চলে গ্যাস ও তেলের উৎপাদন দ্বিগুন করে পাইপলাইনের মাধ্যমে তা বিতরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন এ-পরিকল্পনার লক্ষ্য।
আপনার মন্তব্য
সম্পর্কিত অন্যান্য
- ত্রিজাতি পাইপলাইন প্রকল্প পুনরুজ্জীবিতঃ বাংলাদেশের উপর দিয়ে মায়ানমারের গ্যাস নিতে চায় ভারত
- বাংলাদেশকে আরও ১ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রস্তাব ভারতের
- ভারতের রাষ্ট্রীয় কোম্পানীকে বঙ্গোপসাগরের দু'টো গ্যাস ব্লকের ইজারা দিয়েছে বাংলাদেশ
- ভারত-মার্কিন দ্বন্দ্ব ও বাংলাদেশ
- বাংলাদেশে সরকারী জোটের একতরফা নির্বাচনঃ সহিংসতায় ২০ জন নিহত