সংবাদ পরিক্রমা
- ভারত-বাংলাদেশ দেড়শো কোটি ডলারের বিদ্যুৎ-উৎপাদন চুক্তিঃ সুন্দরবনের ক্ষতির আশঙ্কা
ইউকেবেঙ্গলি - ৩০ জানুয়ারী ২০১২, সোমবারঃ গতকাল ঢাকায় বাংলাদেশের পাওয়ার ডিভালপমেন্ট বৌর্ড (পিডিবি) ও ভারতের রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পৌরেশন (এনটিপিসি) কয়লা-ভিত্তিক তাপ-বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে একটি চুক্তি সাক্ষর করেছে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত সুন্দরবন-সংলগ্ন বাগেরহাটে এ-প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দেড়শো কোটি মার্কিন ডলার (১২,৬০০ কোটি টাকা) খরচ হবে। বিদ্যুৎ-খাতে বিদেশী কোন কৌম্পানীর সাথে বাংলাদেশের সম্পাদিত চুক্তির মধ্যে এটিই বৃহত্তম।
পরিবেশবাদীদের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই আপত্তি তোলা হয়েছে ১৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা-সম্পন্ন এ-বিদ্যুৎ-কেন্দ্র নির্মাণের স্থান নিয়ে। তাঁরা বলছেন, এর ফলে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। উল্লেখ্যঃ সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রৌভ ফরেস্ট, যা ইউনেস্কোর 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট' তালিকায় অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
দেশটির ১২ জন 'বিশিষ্ট ব্যক্তি' চুক্তি সাক্ষরিত হবার আগেরদিন এক বিবৃতির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবী জানান যেন এ-প্রকল্প বাস্তবায়ন করা না হয়। তাঁরা বলেন, 'যদিও আমরা সরকারের আরও বিদ্যুত উৎপাদনের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই, তবে প্রকল্পের নির্বাচিত স্থানের ব্যাপারে আমরা গুরুতর চিন্তিত'। তাঁদের দাবী 'প্রাথমিক পরিবেশ প্রতিবেদন', যার ভিত্তিতে সরকার এ-স্থান নির্বাচনে সম্মতি দিয়েছে, তাতে কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ-কেন্দ্রের কী ধরণের প্রভাব সুন্দরবনের উপর পড়বে তা আমলে নেয়া হয়নি। জবাবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সুন্দরবনের উপর ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও ভারতের এনার্জি সেক্রেট্যারি উমা শঙ্করের উপস্থিতিতে পিডিবির চেয়ারম্যান আলমগীর কবির ও এনটিপিসির চেয়ারম্যান অরূপ রায় চৌধুরী স্ব-স্ব পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। কবির জানান, 'আমরা আশা করি এ-কেন্দ্র ২০১৬ সালের মধ্যে জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে'। শঙ্কর বলেন, 'এ-চুক্তি প্রতিবেশী দেশ-দুটির মধ্যে বৃহত্তর সহযোগীতার মঞ্চ উন্মোচিত করলো'।
যৌথ-অংশীদারীত্বের এ-প্রকল্পের মোট খরচের ৭০% অর্থায়ন করা হবে ঋণের মাধ্যমে, বাকী ৩০% উভয়েই যৌথভাবে যোগান দেবে। তবে ঋণ কার কাছ থেকে নেয়া হবে তা এখনও জানা জায়নি।
পিডিবি-সূত্র জানিয়েছে যে, প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে এ-কেন্দ্রের খরচ পড়বে ৫ টাকা থেকে ৭ টাকা। কয়লা কোথা থেকে আমদানি করা হবে, সে-বিষয়ে বিস্তারিত নিশ্চিত না করলেও পিডিবির প্রধান জানান, 'ইন্দোনেসিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কয়লা আনা হতে পারে'। তিনি এ-প্রসঙ্গে আরও বলেন, 'স্থানীয় কয়লা ব্যবহার করা হবে, যদি যোগান পাওয়া যায়'।
বর্তমানে বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৮২% উৎপাদন করা হয় গ্যাস পুড়িয়ে। গ্যাসের মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে আসার কারণে দেশটি বিদ্যুৎ উত্পাদনের জন্য ক্রমাগত কয়লায় দিকে ঝুঁকছে, যার সম্ভাব্য মজুদের পরিমাণ ৩৪০ কোটি টন। এছাড়াও, পরমাণু শক্তি ব্যবহার করে ২,০০০ মেগা-ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্দেশ্যে গত বছরের নভেম্বরে দেশটি রাশিয়ার সাথে একটি চুক্তি করে, যা ২০১৮ সাল নাগাদ বাস্তবায়িত হবে।