সংবাদ পরিক্রমা
- সিরিয়া গৃহযুদ্ধঃ ব্রিটেইন-ফ্রান্স-যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি রাশিয়া
ইউকেবেঙ্গলি - ২৯ মে ২০১৩, বুধবারঃ সিরিয়ার সুন্নি ইসলামবাদী বিদ্রোহীদেরকে অস্ত্র-সরবরাহের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে অস্ত্র সরবহারের কথা-বার্তা শুরু করার পর রাশিয়া জানিয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে 'বিদেশী আক্রমণ' ঠেকাতে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র দেবে। এ-অবস্থায় আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিতব্য 'সিরিয়া শান্তি সম্মেলন'-এর আকাঙ্খিত সাফল্য নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
গত পরশু ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক সভায় সিরিয়ার বিদ্রোহীদেরকে অস্ত্র-দানে জোটটির পূর্বারোপিত নিষিদ্ধি রহিত করা হয়। ইইউ'র এ-সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সিরিয়ায় রাশিয়ার অস্ত্র বিক্রিকে 'ভুল কাজ' বলে আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রিটেইন ও ফ্রান্স বৎসরাধিককাল যাবত এ-নিষিদ্ধি বাতিলের জোর কুটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিলো। উল্লেখ্য, এ-দুই প্রতিবেশী ও প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শক্তি সম্প্রতি একই প্রক্রিয়া সিরিয়ার প্রতিবেশি লিবিয়ার সরকার উৎখাতে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে।
ওদিকে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা নতুন করে অস্ত্র চাইতে শুরু করেছে। অনেকগুলো বিদ্রোহী অংশের মধ্যে ব্যাপকভাবে পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ট বিদ্রোহী সংঘ সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিল আজ এক বিবৃতিতে 'বিশেষায়িত অস্ত্র' দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আর্জি জানিয়েছে। এ-পর্যন্ত তাদের অস্ত্রের সরবরাহ হতো প্রধানত তুরষ্ক-সীমান্ত পথে, যার পেছনে সৌদি আরব, কাতার ও আরব আমিরাত রয়েছে বলে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
আজ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেইগ বিবিসিকে বলেছেন, 'ব্রিটেইন চাইলে [সিরিয়ার বিদ্রোহীদেরকে] এখুনি অস্ত্র দিতে পারে'। তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার সিরিয়ার প্রেসিডেণ্ট বাশার আল-আসাদের উপর চাপ আরও বাড়বে। তবে তিনি নিশ্চিত করেননি কবে কিংবা কী ধরণের অস্ত্র ব্রিটেইন সরবরাহ করতে শুরু করবে।
ইইউ'র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে রাশিয়া। একই সাথে দেশটি জানিয়েছে, বহিরাক্রমণ ঠেকাতে সিরিয়াকে এস-৩০০ বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র দেবে। এ-সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছে ব্রিটেইন ও তার মিত্ররা। তবে রাশিয়া বলছে, 'পুরনো চুক্তি-মোতাবেক' এ-অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে এবং এতে কোনও ধরণের আন্তর্জাতিক আইন ভাঙ্গা হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, বিদ্রোহীদের মধ্যে একাধিক দল রয়েছে যারা আল-কায়েদার সাথে সরাসরি সম্পর্কে যুক্ত। এদের মধ্যে প্রধান, আল-নুসরা ফ্রণ্টকে খোদ যুক্তরাষ্ট্র 'সন্ত্রাসী' সংগঠন হিসেবে তালিকাভূক্ত করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্ততঃ ৫০০ ইউরোপীয় এ-মুহূর্তে সিরিয়ার 'জিহাদে' যোগ দিয়েছে। যুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিয়ে এরা ফিরে আসার পর ইউরোপে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে।
ধারণা করা হচ্ছে, অনুষ্ঠিতব্য শান্তি সম্মেলনে সিরিয়ার সরকারের সাথে দরকষাকষিতে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকার প্রচেষ্টা হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অস্ত্র-নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে; অন্যদিকে, ফ্রান্স-ব্রিটেইনের নেতৃত্বে লিবিয়ায় যেভাবে নৌ-ফ্লাই জৌনের নামে সাত মাস অনবরত বিমান হামলা করে আল-কায়েদা-সংশ্লিষ্ট বিদ্রোহীদের জন্য যুদ্ধ জয় সহজ করে দেয়া হয়েছিলো, সে-পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঠেকাতেই সিরিয়াকে বিমান-বিধ্বংসী অস্ত্র দিচ্ছে রাশিয়া।
আপনার মন্তব্য
সম্পর্কিত অন্যান্য
- ইরানের সাথে পরমাণু-প্রকল্প নিয়ে আলোচনাঃ ছাড় দিতে রাজি ছয় পরাশক্তি
- সিরিয়া গৃহযুদ্ধঃ জাতিসঙ্ঘ বলছে বিদ্রোহীরা যুদ্ধাপরাধী, যুক্তরাষ্ট্র চায় নতুন বিদ্রোহী-নেতৃত্ব
- গৃহযুদ্ধের মধ্যেও সিরিয়ায় গণভৌট অনুষ্ঠিতঃ নতুন সংবিধানের পক্ষে ৮৯% সমর্থন
- সিরিয়া-সংঘাতঃ জাতিসংঘে পশ্চিমা-জোটের প্রস্তাবনায় চীন ও রাশিয়ার ভিটো
- সিরিয়ার জল-সীমায় মুখোমুখি রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রঃ আরেকটি যুদ্ধ কি প্রত্যাসন্ন?