সংবাদ পরিক্রমা
- ৩৫ সরকার-প্রধানের ফৌনে আড়িপাতাঃ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষুব্ধ ইউরোপ
ইউকেবেঙ্গলি - ২৫ অক্টোবর ২০১৩, শুক্রবারঃ যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ) বিশ্বের প্রায় ৩৫টি দেশের সরকার প্রধানদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফৌনে আড়ি পেতেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো।
এনএসএ'র প্রাক্তন কর্মী এডোয়ার্ড স্নৌডেন গত জুন মাস থেকে সংস্থাটির অভাবিত মাত্রার বিশ্বজোড়া গোয়েন্দাগিরির কথা ফাঁস করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হাত থেকে 'প্রাণ বাঁচাতে' রাশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেন।
স্নৌডেনের ফাঁস করা ও দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত তথ্যে জানা গিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী একটি বিভাগের একজন কর্মকর্তা ৩৫টি দেশের সরকার প্রধানদের টেলিফৌন নাম্বার এনএসএ'রকাছে হস্তান্তর করে যেগুলোর উপরে পরবর্তীতে নজরদারি চালানো হয়।
জার্মানীর চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মার্কেল পরশুরাতে মার্কিন প্রেসিডেণ্ট বারাক ওবামাকে সরাসরি টেলিফৌন করে এ-ব্যাপারে তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বেলজিয়ামের ব্রাসেল্সে ইউরোসঙ্ঘের এক সম্মেলনে যোগ দিতে আসা অন্যান্য ইউরোপীয় নেতারাও এ-প্রসঙ্গে তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ব্রাসেলসে পৌঁছে মার্কেল বলেন, "আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেণ্টের কাছে স্পষ্ট করে বলেছি, মিত্রদের উপরে গোয়েন্দাগিরি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।" তিনি আরও বলেন, "মিত্র ও অংশীদারদের উপরে আমাদের আস্থা থাকা প্রয়োজন এবং এখন এ-আস্থা আরেকবার প্রতিষ্ঠিত হতেই হবে।"
গত সপ্তায় জার্মান পত্র-পত্রিকায় সে-দেশের সরকারের উপরে মার্কিন গোয়েন্দাগিরির খবর প্রকাশিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতকে ডেকে পাঠান পররাষ্ট্র মন্ত্রী।
অনুরূপভাবে ফ্রান্সের সংবাদ-মাধ্যমও জানায় মাত্র এক মাসেই ফরাসী নাগরিকগণের অন্ততঃ ৭০ নিযুত (মিলিয়ন) ফৌন কলের উপরে নজরদারি চালায় যুক্তরাষ্ট্রের এনএসএ। এতে প্রেসিডেণ্ট ফ্রাঁসোয়া অলান্দ অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হন। ব্রাসেলস সম্মেলন চলাকালে এ্যাঙ্গেলা মার্কেলের সাথে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হয়ে তার সহমর্মিতার কথা জানান।
অলন্দাজ (ডাচ) প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট জার্মানীর চ্যান্সেলরের সমর্থনে বলেন, "[যুক্তরাষ্ট্রের কাছে] অভিযোগে আমি তাঁকে [মার্কেলকে] সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করবো এবং বলবো এটি গ্রহণযোগ্য নয়।"
বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী এলিও দি রুপো বলেন, "এ-সঙ্ঘবদ্ধ গোয়েন্দাগিরি আমরা মেনে নিতে পারি না। আমাদেরকে ব্যবস্থা নিতে হবে... [স্ব-স্ব] জাতীয় ব্যবস্থা নয়, নিখিল ইউরোপীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।"
তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেইভিড ক্যামেরোন এ-ব্যাপারে নীরব থাকেন। তাঁর দেশের এনএসএ সমকক্ষ জিসিএইচকিউ একই কায়দায় সমগ্র ইণ্টারনেটে গোয়েন্দাগিরি জন্য সাবমেরিন ক্যাবলে আড়ি পাতে বলে জানিয়েছে স্নৌডেনের ফাঁস করা দলিলাদি। সংস্থাটি প্রতিদিন কোটি-কোটি টেলিফৌন কল, ইমেইল, ফ্যাক্স, ইণ্টারনেট চ্যাট, ফেইসবুক বার্তা ইত্যাদির উপরে নজরাদি চালায়।
স্নৌডেনের ফাঁস করা গোয়েন্দা তথ্যের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশের কূটনৈতক সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। রাশিয়া স্নৌডেনকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে, ব্রাজিলের প্রেসিডেণ্ট পূর্বনির্ধারিত যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল করেছেন, লাতিন আমেরিকার দেশগুলোও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তবে এবার ঘনিষ্ঠ ইউরোপীয় মিত্ররাও গোয়েন্দাগিরির শিকার হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কার্যক্রম-বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ হলো।
আপনার মন্তব্য
সম্পর্কিত অন্যান্য
- সাবমেরিন কেবলে আড়ি পেতে সমগ্র ইণ্টারনেটে গোয়েন্দাগিরি করছে ব্রিটেইনঃ সাথে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
- অস্থায়ীভাবে ঋণ-সীমা বৃদ্ধিঃ খেলাপি হওয়া এড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, খুলছে সরকারী পরিষেবা
- যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের ফলে ইরাকে প্রায় পাঁচ লাখ প্রাণহানি
- সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস-প্রক্রিয়া শুরুঃ আসাদের প্রশংসা কেরির
- মার্কিন শাট-ডাউনের ষষ্ঠ দিনঃ ৮ লাখ কর্মীর বাধ্যতামূলক অবৈতনিক ছুটি